অপরাধ প্রতিবেদক : রাজধানী ঢাকার মুগদা থানাধীন মানিকনগর এলাকায় ড্যামকেয়ার স্টাইলে চলছে ভরষা হাউজিং এন্ড ডেভেলপার কোম্পানির নকশাবহির্ভূত ভবন নির্মাণের কাজ। মানিকনগর এলাকাটি রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এর সাব-জোন ৬/১ এর অন্তর্ভুক্ত। সম্প্রতি মানিকনগর এলাকায় ভরষা হাউজিং এন্ড ডেভেলপার কোম্পানির কয়েকটি নকশাবহির্ভূত ভবনে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে রাজউক। এসময় মাহিম বিল্ডার্স এন্ড কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের ‘মাহিম শপিং মল’, সেইলের কুটুমবাড়ি, সরদার বাড়িসহ মোট ১১টি ভবনের আংশিক অপসারণ ও জরিমানা আদায় করা হয়। এছাড়াও ৪টি ভবনের ৬টি বিদ্যুতের মিটারের সংযোগ বিচ্ছিন্নপূর্বক মিটার জব্দ করা হয়েছে। একইসঙ্গে ভবন মালিকগণ যাতে নিজ উদ্যোগে ব্যত্যয়কৃত অংশ অপসারণ করে নকশা মেনে ভবন নির্মাণ কাজ করে সেই মর্মে ১ মাসের সময় বেধে দিয়ে মুচলেকা নেওয়া হয়। কিন্তু কোন কিছুর তোয়াক্কা না করে আবারও অবৈধভাবে ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু করেছে ভরষা হাউজিং এন্ড ডেভেলপার কোম্পানির কর্ণধার আওয়ামীলীগ নেতা সাহেব আলী।
এ ব্যাপারে ইমারত পরিদর্শক তন্ময় দেবনাথ বলেন, প্রধান ইমারত পরিদর্শক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ায় অত্র এলাকার দায়িত্ব থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
ভরষা হাউজিং এন্ড ডেভেলপার কোম্পানির আইনবহির্ভূতভাবে ভবন নির্মাণ করার বিষয়ে অথরাইজড অফিসার প্রকৌশলী মো. হাসানুজ্জামানকে অবহিত করা হলে তিনি বলেন, আইনের বাইরে নির্মাণ কাজ করার কোন সুযোগ নেই। দায়িত্বপ্রাপ্ত ইমারত পরিদর্শককে নির্মাণস্থলে পাঠানো হবে। তার রিপোর্ট পেলে বিধি অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ৩/৪ বছর ধরে মানিকনগর এলাকায় দোর্দণ্ড দাপটের সঙ্গে রাজউকের কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করেই নকশাবহির্ভূতভাবে ভবন নির্মাণ করে চলেছে ভরষা হাউজিং এন্ড ডেভেলপার কোম্পানি। সম্প্রতি সেসব দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের দুর্নীতির বিষয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে তাদের বদলি করা হয়। জোন-৬/১ এ মো. হাসানুজ্জামান অথরাইজড অফিসার হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর অনিয়মের বিষয়গুলো অবহিত করা হলে তিনি খোঁজ-খবর নিয়ে তড়িৎ ব্যবস্থা নেন। কিন্তু অনৈতিক সুবিধাভোগী সাবেক কর্মকর্তাদের পরামর্শে আবারও অবৈধভাবে ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু করেছে ভরষা হাউজিং এন্ড ডেভেলপার কোম্পানি।
গত ৪ জুন ভরষা হাউজিংয়ের অবৈধভাবে নির্মাণাধীন ভবনগুলোতে রাজউকের অভিযানের পর গণমাধ্যমকর্মীদের উপর ক্ষোভে ফুঁসে ওঠেন সাহেব আলীর লোকজন। গণমাধ্যমকর্মীদের পেশাকে বিতর্কিত করার উদ্দেশ্যে তথ্যপ্রমাণ বিহীন কাল্পনিক সংবাদও প্রচার করান। কিন্তু তাতে কাজ না হওয়ায় সাংবাদিকদের ম্যানেজ করারও উদ্যোগ নেওয়া হয় সাহেব আলীর পক্ষ থেকে। সব ধরনের চেষ্টায় সাংবাদিকদের ম্যানেজে ব্যর্থ হয়ে এবার ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে বিধিবহির্ভূতভাবে ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করেছেন সাহেব আলী। শুধু তাই নয়, অভিযানে ভেঙে দেয়া অংশও পুনরায় নির্মাণ করেছে ভরষা হাউজিং এন্ড ডেভেলপার কোম্পানি।
মানিকনগরে ভরষা হাউজিং ছাড়াও ব্যক্তিমালিকানাধীন বেশকিছু নির্মাণাধীন ভবন রয়েছে। তারা রাজউক থেকে নামমাত্র নকশা অনুমোদন করিয়ে নিজেদের খেয়াল খুশিমতো বহুতল ভবন নির্মাণ করছেন। নকশা মানা তো দূরের কথা এক ইঞ্চি জায়গাও ছাড়েননি তারা। গত ৪ জুনের অভিযানের পর সবার মাঝে আতংক বিরাজ করছে। তাই তারা এখন রাজউককে ম্যানেজের জন্য বিভিন্ন মাধ্যমে তদবির শুরু করেছেন।
তদবিরের মাধ্যম হিসেবে প্রথম সারির তালিকায় রয়েছেন জোন-৭/২ এর প্রধান ইমারত পরিদর্শক কামাল হোসেন। মানিকনগরে কামাল হোসেনের ৬ তলা বিশিষ্ট ২টি ভবন রয়েছে। রাজউক কর্মকর্তা হলেও নিজেই মানেননি ভবন নির্মাণ বিধি। অনুসন্ধানে জানা গেছে, কামাল হোসেন রাজউকে চাকরি করার সুবাদে অত্র এলাকার বেশিরভাগ ভবনের নকশা অনুমোদনের দালালি করেন তিনি। নিজের দাপ্তরিক কাজের বাইরেও তিনি নকশা অনুমোদন ও অভিযান ঠেকানোর তদবির করে থাকেন। এ জন্য তার বাসার নিচ তলায় একটি অফিসও রয়েছে। মানিকনগর এলাকায় অভিযান বন্ধ থাকার অন্যতম কারণও কামাল হোসেন। ভবন মালিকরা তার কাছে গেলেই সমাধান মিলে যায়।
ভরষা হাউজিংয়ের পক্ষেও কামাল হোসেন সাংবাদিকদের ম্যানেজের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। একজন সরকারি চাকরিজীবী হয়ে হাউজিং কোম্পানির পক্ষে দালালি করা চাকরিবিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।রাজউকের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারাই যদি উৎকোচের বিনিময়ে ভবন মালিকদের নিয়ম ভাঙার সাহসের যোগান দেন; তাহলে রাজধানী ঢাকার বুকে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন নির্মাণ ঠেকানোর সাধ্য আছে কার?