হাফিজুর রহমান লাভলু, শেরপুর প্রতিনিধি: পবিত্র ঈদুল আজহায় কোরবানির হাট কাঁপাবে শেরপুরের নকলা উপজেলার দেশি জাতের ষাঁড় নবাব।কালচে সাদা রঙের ও সুঠাম দেহের দেশি জাতের ষাঁড়টি উপজেলার পাঠাকাটা ইউনিয়নের পলাশকান্দি গ্রামের কাজী বাড়ীর কাজিম উদ্দিনের ছেলে ফিরোজ মিয়া শখের বসে লালন-পালন করছেন।
নবাব নাম রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে ফিরোজ মিয়া বলেন, বাছুর অবস্থা থেকেই শান্ত স্বভাবের এই ষাঁড়টি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে পছন্দ করে। ষাঁড়টি কখনও গায়ে মল-মূত্র লাগাতে দেয় না। পরিষ্কার জায়গা ছাড়া সে শুতে পর্যন্ত চায় না। তাই ছোট থেকেই তার নাম দিয়েছি নবাব।
তিনি বলেন, শখের বশেই শতভাগ দেশীয় জাতের এই গরুটি তিনি পালন করেছেন। তাদের এলাকায় দেশীয় ষাঁড়ের মধ্যে সবচেয়ে বড় দেশি ষাঁড় এটি। নবাবের বর্তমান দৈর্ঘ্য প্রায় ১০ ফুট এবং ওজন প্রায় ১৮ মণ (৭২০ কেজি)। তারা সব প্রাকৃতিক খাবার খাইয়ে বড় করেছেন। অতীতে শতভাগ দেশীয় জাতের এতবড় ষাঁড় অনেকে দেখেনি বলে স্থানীয়রা জানান।
তিনি জানান, তার বাড়িতে অপরিচিত কেউ গেলেই স্থানীয়রা মনে করেন আগতরা হয়তোবা নবাবকে কিনতে এসেছেন। তাই মুহূর্তের মধ্যে ভিড় জমিয়ে ফেলেন।
তিনি বলেন, নবাবকে মোটাতাজাকরণের জন্য কোম্পানির বা কৃত্তিম কোনো প্রকার ফিড খাওয়ানো হয়নি। সম্পূর্ণ দেশীয় খাবার খাইয়ে নবাবকে বড় করেছি। নবাবকে বর্তমান অবস্থায় আনতে তার সময় লেগেছে প্রায় সাড়ে ৩ বছর।
ফিরোজ মিয়া বলেন, বাজার মূল্য অনুযায়ী বিক্রি করতে চাই। তবে আমি আমার নবাবের দাম প্রথমে ১০ লাখ টাকা চাইলেও, বিভিন্ন বিষয়টি বিবেচনায় রেখে আপাতত ৮ লাখ টাকা দাম চাচ্ছি। তবে ক্রেতার সঙ্গে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে কিছু ছাড় দিয়ে হলেও বিক্রি করে দেবো।
তিনি আরও বলেন, গত বছর কোরবানি ঈদের বাজারে বিক্রির উদ্দেশ্যে নবাবকে বাজারে নিয়ে গেলেও, ন্যায্য দাম না ওঠায় বিক্রি করেননি। তবে এবছর আগ্রহী ক্রেতার সঙ্গে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে বিক্রি করবেন। তাছাড়া ন্যায্য মূল্য পেলে ভবিষ্যতে এমন ষাঁড় লালন পালনে চেষ্টা করবেন বলেও জানান তিনি।
নবাবকে দেখতে আসা নকলা শহরের বাসিন্দা রাজন মিয়া জানান, ষাঁড়টি দেখতে অনেক পরিষ্কার। তার গায়ে কোনো প্রকার ময়লা নেই। দেশি গরু এতো বড় হয়, আমি তা কখনো দেখিনি।
এছাড়া টালকী ইউনিয়নের রফিকুল ইসলাম বলেন, আমি এর আগেও এসেছিলাম একদিন। তখন নবাবকে প্রথম দেখেছি। এই ষাঁড়টা দেশীয় জাতের এবং এটিকে সম্পূর্ণ দেশীয় খাবার দিয়ে পালন করা হয়েছে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. মুহাম্মদ ইসহাক আলীর সঙ্গে নবাবের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়ে জানতে চাইলে, তিনি ওজন ও প্রয়োজনের ভিত্তিতে প্রাকৃতিক (ব্যালেন্সড) সুষম খাবার খাওয়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। তাই নবাবের খাদ্য তালিকায় পরিমিত পরিমাণে সবুজ ঘাস, খড়, গমের ভূষি, ভুট্টা ভাঙা, সরিষার খৈল, চিটা গুড়, মিষ্টি লাউ, কলা, গোল আলু, চালের কুড়া, লবণ ও প্রয়োজন মতো পরিষ্কার পানি রাখা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, উপজেলায় মোট ২ হাজার খামারি রয়েছেন। এসব খামারে ১৬ হাজার ৮২০টি হৃষ্টপুষ্টকরণ গবাদি পশু রয়েছে, যা আসন্ন ঈদে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছ। এরমধ্যে ষাঁড় ৯ হাজার ৫৭৪টি, বলদ ৭১৯টি, গাভী এক হাজার ৪৫০টি, মহিষ ২৬২টি, ছাগল ৪ হাজার ৪৩০টি ও ভেড়া রয়েছে ৩৮৫টি।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার ডা. রেজওয়ানুল হক ভূঁইয়া জানান, কোরবানির পশুকে অসদুপায়ে মোটাতাজা না করার জন্য আমরা বিভিন্ন এলাকায় সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন করেছি। আমরা খামারিদের প্রস্তুত করা পশুকে স্টেরয়েড হরমোন ও কেমিক্যাল না খাওয়ানোর পরামর্শ দিয়েছি। গবাদিপশুকে পোলট্রি ফিড বা বয়লার ফিড খাওয়ানো যাবে না। গরুর পরিচর্যায় পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের ব্যবস্থা করতে হবে। তাছাড়া বিভিন্ন ভেটেরিনারি ফার্মেসিতে নিম্নমানের ওষুধসামগ্রী না রাখার বিষয়ে তদারকি করা হচ্ছে। তবে কয়েক দফায় গোখাদ্যের দাম বাড়ায় উৎপাদন খরচ কিছুটা বেড়েছে খামারিদের।
তিনি আরও জানান, জেলার ৫ উপজেলার ছোট বড় প্রায় ১৩ হাজার ৭৩১ জন খামারি রয়েছেন। এ ছাড়াও অনেক পরিবার ব্যক্তিগতভাবে গরু, মহিষ ও ছাগল পালনের সঙ্গে জড়িত আছে। এবার কোরবানির জন্য শেরপুর জেলায় ৫১ হাজার ২২৫টি পশুর চাহিদা থাকলেও প্রস্তুত হয়েছে ৮৩ হাজার ৮০২টি পশু। যা চাহিদার তুলনায় প্রায় ৩২ হাজার বেশি। প্রস্তুত করা এসব পশু নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বাইরে হাট বাজারগুলোতে বিক্রি হবে।