অনলাইন ডেস্ক : প্রতিষ্ঠার এক যুগেও গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড (জিসিএফ) লক্ষ্য পূরণ করতে পারেনি। বাংলাদেশের মতো ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলো তহবিল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তাদের অদক্ষতা ও দুর্নীতির কারণে। বরাদ্দও কমেছে। উন্নত দেশ থেকে প্রতিশ্রুত তহবিল সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হয়ে জিসিএফ অনুদানের বদলে ঋণ দিচ্ছে। ফলে জলবায়ু সংকটে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর ওপর চাপছে ঋণ শোধের বোঝা।
মঙ্গলবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে সংবাদ সম্মেলনে ‘সবুজ জলবায়ু তহবিলে বাংলাদেশের মতো ঝুঁকিপূর্ণ দেশের অভিগম্যতা : সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানায় ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
এ সময় টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, অভিগম্যতার ক্ষেত্রে জিসিএফ শুরু থেকে এমন শর্ত দিয়েছে, যা উন্নয়নশীল দেশকে প্রায় নিষিদ্ধ করার পর্যায়ে নিয়ে গেছে। এ তহবিলের সুফল যাদের পাওয়ার কথা, তারা পর্যাপ্ত ও প্রত্যাশিত সহায়তা পায়নি। নির্ধারিত অর্থ ছাড়ের প্রক্রিয়া যেমন মানছে না, তেমনি জিসিএফ প্রকল্প অনুমোদন ও অর্থ হস্তান্তর করতে পারছে না। বিশ্বব্যাংক, ইউএনডিপি, আইডিবি, এডিবি, ইবিআরডির মতো বিত্তবান আন্তর্জাতিক সংস্থাকে বেশি অর্থায়ন করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে জিসিএফ হয়ে উঠছে জবাবদিহিহীন।
ক্ষতিগ্রস্ত দেশের ওপর ঋণের বোঝা চাপানো নীতির সমালোচনা করে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে জিসিএফ বৈষম্যমূলকভাবে শুধু বেশি সহায়তা দিচ্ছে তা-ই নয়, সিংহ ভাগই দিচ্ছে অনুদান হিসেবে। বিপরীতে উন্নয়নশীল দেশের জাতীয় সংস্থাকে ঋণ বেশি দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশের মতো দেশে অর্থায়নে জিসিএফ দুর্নীতি, স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও সক্ষমতা ঘাটতির কথা বললেও, ক্ষেত্র বিশেষে নিজেরাই দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিচ্ছে। ইউএনডিপির জিসিএফ সম্পর্কিত কাজে দুর্নীতির অভিযোগ সত্ত্বেও এবং চলমান ছয় প্রকল্পে মনিটরিং চলমান অবস্থায় তাদের অ্যাক্রিডিটেশন নবায়ন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে জিসিএফ অঙ্গীকার ভঙ্গ করে দুর্নীতির সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।
সংবাদ সম্মেলনে গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন টিআইবির গবেষক নেওয়াজুল মাওলা ও সহিদুল ইসলাম। প্রতিবেদনে বলা হয়, জাতীয় ও আঞ্চলিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে জিসিএফের ঋণের হার যথাক্রমে– ৪৪ দশমিক ৫ এবং ৬৯ দশমিক ৭ শতাংশ। আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের ঋণের হার ৩৫ দশমিক ৮ শতাংশ, যা জাতীয় ও আঞ্চলিক প্রতিষ্ঠানের তুলনায় কম। এ ক্ষেত্রে অনুদানের পরিমাণ জাতীয় প্রতিষ্ঠানের জন্য ৪৪ দশমিক ১, আঞ্চলিক প্রতিষ্ঠানের জন্য ২৮ দশমিক ৫ ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের জন্য ৪৩ দশমিক ৪ শতাংশ।
টিআইবি বলছে, ২০১৫ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত জিসিএফ অনুমোদিত সাড়ে ১৩ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে জাতীয় প্রতিষ্ঠান পেয়েছে মাত্র ১ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার (১২.২ শতাংশ)। আঞ্চলিক প্রতিষ্ঠান ১ দশমিক ৬ বিলিয়ন (৮ শতাংশ) ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান পেয়েছে ১০ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার (৭৯ দশমিক ৮ শতাংশ)। মাত্র পাঁচটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের (ইউএনডিপি, বিশ্বব্যাংক, ইবিআরডি, এডিবি ও আইডিবি) জন্য জিসিএফের মোট অনুমোদিত অর্থের ৩৯ দশমিক ৪ শতাংশ বরাদ্দ করা হয়েছে। বাকি ২২টি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান পেয়েছে ৪০ দশমিক ৪ শতাংশ।
গবেষক নেওয়াজুল মাওলা বলেন, বাংলাদেশের জন্য জিসিএফ তহবিলের ৯টি প্রকল্পে মোট অনুমোদিত অর্থের মাত্র ১৩ দশমিক ৩ শতাংশ ছাড় করা হয়েছে, তাও অনেক দেরিতে। প্রকল্প অনুমোদনের তিন বছর পর প্রথম কিস্তির অর্থ ছাড় করা হয়। ফলে বাস্তবায়নে বিলম্ব হওয়ায় প্রকল্পভুক্ত এলাকায় জলবায়ু ঝুঁকি বেড়েছে।
অঞ্চলভিত্তিক বিশ্লেষণ থেকে প্রতিবেদনে বলা হয়, জিসিএফ স্বীকৃত ‘তহবিল পাওয়ার যোগ্য’ ১৫৪ দেশের মধ্যে ২৫টিই (১৬ দশমিক ২ শতাংশ) প্রকল্প পায়নি। এ তালিকায় এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের সর্বোচ্চ (১৪টি দেশ) সংখ্যক দেশ প্রকল্প পায়নি এবং রয়েছে আফ্রিকা অঞ্চলের ছয় দেশ। লাতিন আমেরিকা এবং ক্যারিবিয়ান অঞ্চল ও পূর্ব ইউরোপের যথাক্রমে একটি করে দেশ প্রকল্প পায়নি।
জিসিএফের নীতি অনুসারে ‘বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ’ দেশের জন্য অভিযোজন তহবিল বরাদ্দে গুরুত্ব দেওয়া হলেও ৪২টি দেশে অর্থায়ন হয়নি। যেসব ঝুঁকিপূর্ণ দেশে অভিযোজনের অর্থায়ন হয়েছে, তার অধিকাংশ আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। জাতীয় প্রতিষ্ঠানকে উপেক্ষা করা হয়েছে।