অনলাইন ডেস্ক : ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও ব্যবসায়ীদের দাপট বাড়ছে, অনেকেরই অবিশ্বাস্য হারে আয় ও সম্পদের বিকাশ ঘটছে। ফলে জনস্বার্থ থেকে বিচ্যুত হয়ে ব্যক্তিস্বার্থ বা মুনাফাকেন্দ্রিক রাজনীতি প্রাধান্য পাচ্ছে।
বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি টিআইবি ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন-২০২৪ (১ম ধাপ) এর প্রার্থীদের হলফনামা বিশ্লেষণ ও পর্যবেক্ষণ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এমন মন্তব্য করেন। সংস্থাটির পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, স্থানীয় পর্যায়েও এখন জনস্বার্থ উপেক্ষা করে নির্বাচনকে বিনিয়োগ হিসেবে দেখার প্রবণতা তৈরি হয়েছে।
হলফনামা বিশ্লেষণ করে টিআইবি বলেছে, জাতীয় নির্বাচনের মতো স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও ব্যবসায়ী প্রার্থীদের দাপট বেড়েই চলেছে। ব্যবসায়ী প্রার্থীদের সংখ্যা চতুর্থ নির্বাচনের তুলনায় ৮ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৬ শতাংশ। চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীদের ৬৯.৮৬ শতাংশ, ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীদের প্রায় ৬৬.৫৯ শতাংশ এবং নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীদের ২৪.৩৭ শতাংশের পেশা ব্যবসা। আবার গৃহিণী/গৃহস্থালীকে পেশা হিসেবে দেখানো প্রার্থীদের সাড়ে ১৯ শতাংশের আয় আসে ব্যবসা থেকে।
সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের দেশে রাজনীতি ও জনপ্রতিনিধিত্ব ক্ষমতাকেন্দ্রিক। জনস্বার্থ নয় বরং ব্যক্তিস্বার্থ প্রাধান্য পাচ্ছে। আবার দলীয় শৃঙ্খলা, আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীলতা কিংবা দলের নীতিগত সিদ্ধান্ত মেনে চলার মতো যে ধরনের আচরণ রাজনৈতিক দলের মতো গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের কাছে প্রত্যাশিত, তা ক্ষমতার রাজনীতির কাছে জিম্মি হয়ে গেছে। যেহেতু ক্ষমতায় যেতে পারলে সম্পদ বিকাশের সীমাহীন সুযোগ তৈরি হয়, আর ক্ষমতার বাইরে থাকলে এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতে হয়, ফলে একটি অসুস্থ প্রতিযোগিতা দেখা যাচ্ছে।’
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ধারাবাহিকতায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীদের হলফনামা বিশ্লেষণ ও ড্যাশবোর্ড প্রস্তুত করেছে টিআইবি। উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপের প্রার্থীদের হলফনামা বিশ্লেষণ করে টিআইবি দেখিয়েছে, অস্থাবর সম্পদ বৃদ্ধির হারে সংসদ সদস্যদের পেছনে ফেলেছেন উপজেলা পরিষদের জনপ্রতিনিধিরা। ৫ বছরে সংসদ সদস্যদের অস্থাবর সম্পদ বৃদ্ধির হার সর্বোচ্চ ছিল তিন হাজার ৬৫ শতাংশ। সেখানে একটি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের সম্পদ বেড়েছে ৪ হাজার ২০০ শতাংশের বেশি। একইভাবে, ৫ বছরে একজন চেয়ারম্যানের আয় বেড়েছে সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৩১৯ শতাংশ, ১০ বছরে এই বৃদ্ধির হার সর্বোচ্চ ১৮ হাজার ২৩৩ শতাংশ। অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে সর্বোচ্চ ৪ হাজার ২৫১ শতাংশ, স্ত্রী ও নির্ভরশীলদের সম্পদ বৃদ্ধির সর্বোচ্চ হার ১২ হাজার ৪০০ শতাংশ।