মোঃ বিল্লাল হোসেন জুয়েল (ভোলা): ভোলা জেলার তজুমদ্দিন উপজেলার বড় মলংচড়া ইউনিয়নে সীমানা বিরোধের মামলায় ২১ বছর ধরে কোনো নির্বাচন হচ্ছেনা। সর্বশেষ ২০০৩ সালে অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হন তজুমদ্দিন সরকারী কলেজের প্রভাষক মো. নূরনবী সিকদার। সিমানা বিরোধসহ বিভিন্ন অযুহাতে মামলা দিয়ে গত ২১ বছর ধরে তিনিই চেয়ারম্যান পদটি আকড়ে রেখেছেন। যদিও বর্তমানে ইউনিয়নটির একটি ওয়ার্ড ছাড়া বাকি ৮টি ওয়ার্ডের কোনো অস্তিত্ব নেই। কড়াল গ্রাসী মেঘনার ভাঙনে ইতিমধ্যে ৮টি ওয়ার্ড পুরোপুরি বিলীন হয়ে গেছে। এখন একটি ওয়ার্ড নিয়েই চলছে পুরো ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম।
মেঘনার ভাঙনে ইউনিয়নটি লন্ডভন্ড হয়ে যাওয়া পরিষদের নেই নিজস্ব কোনো ভবনও। বর্তমানে পরিষদের কার্যক্রম চলে টিনশেডের একটি জড়াজীর্ণ ঘরে। বর্তমানে বড় মলংচড়া ইউনিয়নে ভোটার রয়েছেন ৫ হাজার ২০০জন। ইউনিয়নটি ভাঙন কবলিত হওয়ায় ভোটাররা বসবাস পার্শবর্তী উপজেলা বোরহানউদ্দিন, চরফ্যাশন, লালমোহনসহ তজুমদ্দিন উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়।
এমনকি বড় মলংচড়া ইউপি চেয়ারম্যান নিজেও পার্শ্ববর্তী বোরহানউদ্দিন উপজেলায় বসবাস করছেন। বোরহানউদ্দিন উপজেলার বোরহানগঞ্জ বাজারে তার ইসলামি ব্যাংক এজেন্ট শাখা ও তজুমদ্দিন ডাচবাংলা এজেন্ট ব্যাংকের যৌথ ব্যবসা থাকায় ব্যবসা ও চাকরিতে সময় দিয়ে পরিষদের কাজে তেমন একটা সময় দিতে পারে না বলেও জানান চরের বাসিন্দারা।
স্থানীয়দের দাবি, চেয়ারম্যান নূরনবী সিকদার ইচ্ছাকৃতভাবে নিজে ক্ষমতায় থাকার জন্য পাশর্বর্তী ইউনিয়ন ২নং সোনাপুর ইউনিয়নের সঙ্গে সিমানা বিরোধের মামলা দিয়ে নির্বাচন বন্ধ করে রেখেছেন। যদিও সীমানা বিরোধ মামলা নিষ্পত্তি হয়ে সোনাপুর ইউনিয়নের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এরপরও বিভিন্ন কৌশলে মামলার মাধ্যমে চেয়ারম্যান নির্বাচন বন্ধ করে রেখেছেন বলে দাবি স্থানীয়দের।
জানা গেছে, ৮০ দশকে মেঘনা নদীর ভাঙনে মলংচড়া ইউনিয়নটির ৮টি ওয়ার্ড বিলীন হয়ে যায়। তখন সেখানকার বাসিন্দাদের একটি অংশ পার্শ্ববর্তী চর জহিরউদ্দিন সংলগ্ন সিডার চরে বসতি শুরু করেন। সে থেকে ইউনিয়নের একটি ওয়ার্ড তজুমদ্দিনের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে থাকায় সেখানেই চলে পরিষদের কার্যক্রম।
সম্প্রতি গত তিন বছর আগে মেঘনা নদীর মাঝে বড় মলংচড়া ইউনিয়নের পূর্বের চরটি আবারো জেঁগে উঠলে চরটি নাম রাখেন চর রাইয়ান চৌধুরী । চেয়ারম্যান সেখানে নিজের নামে বাজার ও মাছঘাট তৈরি করেন। চরের সরকারি খাস জমি মহিষ মালিকদের কাছে লিজ দেওয়া শুরু করেন। এরপর ধীরে ধীরে লোকজনও সেখানে যাওয়া-আসা শুরু করেন। ২০২৩ সালের দিকে সেখানে হুজুরের খাল নামে আরো একটি মাছঘাট এবং বাজার গড়ে উঠে। সেখানে লোকজন বসবাসের জন্য শতাধিক টিনের ঘর তৈরি করেন।
জানতে চাইলে বড় মলংচড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হাই চৌধুরী বলেন, ইউনিয়নের বিরাট একটি অংশ নদী ভাঙনে বিলীন হয়ে যাওয়ায় বেশির ভাগ মানুষ বিভিন্ন উপজেলায় পরিবার নিয়ে বসবাস করছে। এছাড়া কিছু লোক মেঘনা নদীর বুকে জেঁগে ওঠা নতুন চর রাইয়ানে বসবাস করছেন। বিনা নির্বাচনে ২১ বছর ক্ষমতায় আছেন এই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান।
বড় মলংচড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নূরনবী সিকদার বলেন, ইউনিয়নটির ৯০ শতাংশ মেঘনা নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এখন নতুন করে একটি চর জেঁগেছে। সেখানে মানুষজনের বসতি শুরু হয়েছে। ওই চরে ৮টি ওয়ার্ড পুনঃর্গঠনের কার্যক্রম চলছে। সেটি সম্পূর্ণ হলেই হয়তো নির্বাচন হবে। এছাড়া নির্বাচন বন্ধের পেছনে আমার কোনো হাত নেই।
এ বিষয়ে তজুমদ্দিন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মঞ্জুর হোসেন বলেন, বড় মলংচড়া ইউনিয়নটির অধিকাংশ এলাকাই নদীতে ভেঙে গেছে। এখন একটি মাত্র ওয়ার্ড রয়েছে। নতুন জেঁগে ওঠা চরে বর্তমানে তেমন বসতি না থাকলেও কাগজে-কলমে আরো ৮টি ওয়ার্ড পুনঃবিন্যাসের চেষ্টা করছেন স্থানীয়রা। যা কোনোভাবেই সম্ভব না। তবে স্থানীয় সরকার শাখা যদি এই ইউনিয়নের ওয়ার্ড পুনঃবিন্যাস করে তাহলে নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।