আবু বকর সিদ্দিক স্বপন, ঝিনাইদহ : দৈনিক জবাবদিহি পত্রিকার ঝিনাইদহ প্রতিনিধি ও পরিবহন ব্যবসায়ী আবু সেলিম মিয়ার (৫২) মৃত্যু নিয়ে রহস্যের জন্ম দিয়েছে। তিনি সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন নাকি কেউ তাকে হত্যা করেছে এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবের সদস্য আবু সেলিম মিয়া ঝিনাইদহ সদর উপজেলার হলিধানী গ্রামের মৃত আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে। পুলিশ এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মেরিনা (২৮) খাতুন ও রিপা কর্মকার (২৩) নামে দুই যুবতীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে।
মেরিনা খাতুন মাগুরার শালিখা উপজেলার সামিয়ারপাড়া গ্রামের মন্টু মন্ডলের মেয়ে। তিনি স্বামী পরিত্যক্তা। অন্যদিকে আরেক স্বামী পরিত্যক্তা রিপা কর্মকার ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কাতলামারী গ্রামের রবি কর্মকারের মেয়ে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবারে এই দুই যুবতী নিজেদের ভিন্ন ভিন্ন ঠিকানার পরিচয় দেন। এদিকে এ ঘটনায় আরো এক নারীকে পুলিশ খুজছে। রহস্যজনক ওই নারী সেলিমের দুর্ঘটনার খবরটি মেরিনা ও রিপাকে প্রথম ফোন করে জানায়।
প্রত্যাক্ষদর্শী সুত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে আবু সেলিম মিয়া ঝিনাইদহ শহরের হামদহ আলফালাহ হাসপাতালের সামনে এক নারীর সঙ্গে উচ্চস্বরে কথা বলতে বলতে রাস্তা পার হচ্ছিলেন। এ সময় মটরসাইকেল আরোহী অজ্ঞাত ব্যক্তিরা তাকে মাথায় আঘাত করে দ্রুত গতিতে চলে যায়। এরপর থেকে আবু সেলিম মিয়া সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন বলে প্রচার করা হয়। তার স্বজনরাও বিষয়টি নিয়ে ছিল অন্ধকারে। সেলিমের লাশ গ্রামের বাড়িতে পৌছালে ঘটনাস্থলে উপস্থিত মেরিনা ও রিপার গতিবিধি নিয়ে সন্দেহের সৃষ্টি হলে তাদের জিজ্ঞাসা করা হয়। প্রথমে তারা নিজেদের ভুল ঠিকানায় পরিচয় দেন। পুলিশী জিজ্ঞাসাবাদে তারা সেলিমের হামদহ এলাকার ফ্লাটে পাশাপাশি বসবাস করতেন এবং অজ্ঞাত এক নারীর ফোন পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌছে অজ্ঞান ও মুমুর্ষ অবস্থায় সেলিমকে হাসপাতালে নিয়ে যান বলে জানান। অজ্ঞাত ওই নারীর সঙ্গে সেলিমের কেন এবং কি নিয়ে বাদানুবাদ হলো তা নিয়ে রহস্যের জন্ম দিয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হলে তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখমের চিহ্ন থাকার কথা কিন্তু সেলিমের শরীরে মাথার পেছনে গভীর আঘাত ব্যতিত আর কোন ক্ষত চিহ্ন নেই বলে পুলিশ জানায়।
নিহত’র জামাই সাংবাদিক ইমতিয়াজ আহমেদ জানান, বগুড়া থেকে ফিরে এসে রাত সাড়ে ৯ টার দিকে আলফালাহ হাসপাতাল এলাকায় যান তার শ্বশুর। কাজ শেষে করে রাস্তা উপরে তাকে হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে কে বা কারা। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল ও পরে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক রাত ২ টার দিকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত’র স্ত্রী মমতা বেগম জানান, তার স্বামীকে হত্যা করা হতে পারে। তিনি সঠিক তদন্ত করে প্রকৃত ঘাতকদের চিহ্নি করার দাবী জানান প্রশাসনের কাছে।
ঝিনাইদহ সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মীর আবিদুর রহমান জানান, প্রাথমিক ভাবে এটা পরিকল্পিত হত্যাকান্ড বলে মনে হচ্ছে। তিনি বলেন, তথ্য প্রযুক্তি ও আশপাশের সিসি ক্যামেরা যাচাই করে হত্যার রহস্য উন্মোচন করা হবে। তিনি জানান এ ঘটনায় মেরিনা ও রিপা নামে দুই নারীকে আটক করা হয়েছে। আরো এক নারীকে আমরা খুজছি। আশা করা যায় দ্রুত মোটিভ ও ক্লু উদ্ধার হবে।
এ ঘটনায় নিহত’র স্ত্রী মমতা খাতুন বাদী হয়ে ঝিনাইদহ সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশের একাধিক সুত্র মনে করছে ব্যবসায়ীক শত্রুতা অথবা নারীঘটিত কারণে সেলিম মিয়াকে হত্যা করা হতে পারে। এদিকে বুধবার সকালে সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন তার গ্রামের বাড়িতে যান শোকাতো ।
ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবের সভাপতি এম রায়হান ও সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হাসান টিপু সাংবাদিক আবু সেলিম মিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তারা এক বিবৃতিতে তার শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেন।
প্রবাসি ছেলে সবুজ মিয়া দেশে ফিরলে বুধবার রাতে তাকে হলিধানী গ্রামের পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হবে বলে জানা গেছে।